পোশাক ব্যক্তির সৌন্দর্যবোধ, রুচি এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় তুলে ধরে। নিজের পছন্দমতো পোশাক শুধু ক্ৰয় করলেই চলে না। বরং পোশাকের কর্মউপযোগী ও টেকসই রাখতে হলে পোশাকের যত্ন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ক্রমাগত পরিধানের ফলে নতুন পোশাক ও পুরানো ও জীর্ণ হয়ে পড়ে। এমন পুরানো বা জীর্ণ বস্ত্র বা পোশাককে উপযুক্ত সংস্কারের সাহায্যে নতুনভাবে ব্যবহারোপযোগী করে তোলা যায়। অনেক সময় পোশাকে দাগ লেগে পোশাকটির সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। এই ধরনের ক্ষতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে পোশাকের দাগ উঠিয়ে ফেলা উচিত।
পোশাকের স্থায়িত্ব, সৌন্দর্য ও ব্যবহারোপযোগিতা বজায় রাখার জন্য যথাযথভাবে যত্ন নেওয়া প্রয়োজন । সঠিক নিয়মে যত্ন নিলে কাপড়চোপড় অনেক দিন টেকে, সুন্দর অবস্থায় থাকে এবং অর্থের সাশ্রয় হয়। পরিষ্কার ও পরিপাটি পোশাক দেহ ও মনের সুস্থতা বজায় রাখে ।
মিসেসরেবা শীতের মৌসুমের পর গরম কাপড়গুলোউঠিয়ে রাখেন। পরেরবার শীতের মৌসুমের আগে কাপড়গুলো ব্যবহারকরতে গিয়ে দেখেন অনেকগুলো কাপড় পোকার দ্বারা নষ্ট হয়েছে।
পোশাকের যত্নে সবচেয়ে অধিক প্রচলিত পদ্ধতিটি হলো বস্ত্র ধৌতকরণ। বস্ত্র ধৌতকরণের মূল উদ্দেশ্য হলো-
নিম্নে বস্ত্র পরিষ্কারক এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যের তালিকা দেওয়া হলো :
পরিষ্কারক দ্রব্য
সাবান : সাবান একটি সহজলভ্য উত্তম পরিষ্কারক উপকরণ। বাড়ির বেশির ভাগ কাপড়ই সাবান দিয়ে কাচা হয়। বাজারে বিভিন্ন প্রকার সাবান পাওয়া যায়। সাবানে কস্টিক সোডার পরিমাণ বেশি থাকলে সেই সাবান বস্ত্র পরিষ্কার করার জন্য উপযোগী নয়। বস্ত্ৰ পরিষ্কারক সাবানের কয়েকটা গুণ অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন— সাবান দেখতে হলদে বা গাঢ় রঙের হবে না; সাবান এমন শক্ত হবে যাতে আঙ্গুলের সাহায্যে চাপ দিলে গর্ত হবে না; সাবানের গা মসৃণ হবে; সাবান পানির প্রসারণ ক্ষমতা ও ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ায়; সাবান কাপড়ের ময়লাকে বের করে ধরে রাখে; পানি দিয়ে ধুলে ময়লাসহ সাবান ধুয়ে যায় এবং কাপড় পরিষ্কার হয়ে উঠে।
আনুষঙ্গিক দ্রব্য
বোরাক্স: বোরাক্স নামের এই পরিষ্কারক দ্রবণটি আমাদের দেশে সহজলভ্য নয়। বর্তমানে সোডিয়াম, কার্বণ, বরিক এসিড হতেও কিছু কিছু পরিমাণ বোরাক্স তৈরি করা হচ্ছে। বোরাক্স জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয় তাই কাপড়ে কাঠিন্য এবং ঔজ্জ্বল্য সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই দ্রব্যটি অনেক সময় কাপড়ের দাগ তুলতেও ব্যবহার করা হয়।
কাপড় কাচা সোডা : কাপড় কাচার সোডাকে সোডিয়াম কার্বনেট বলে। বেশি ময়লা তৈলাক্ত কাপড় সোডা দিয়ে সহজে পরিষ্কার করা যায়। বেশি ময়লা এবং তৈলাক্ত সুতি ও লিনেন কাপড় সিদ্ধ করা, জীবাণু মুক্ত করা ও দুর্গন্ধমুক্ত করার জন্য সোডা ব্যবহার করা হয়। তবে সবরকম কাপড়ে সোডা ব্যবহার করা ঠিক নয়। সোডার অতিরিক্ত ৰারের প্রভাবে রেশমি ও পশমি কাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
গুঁড়া সাবান : বর্তমানে আমাদের দেশে গুঁড়া সাবানের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। পাত্রে পরিমাণমতো পানি নিয়ে গুঁড়া সাবান দিয়ে সহজে অনেক কাপড় কাচা যায়। বাজারে বিভিন্ন নামে গুঁড়া সাবান পাওয়া যায়। এইসব গুঁড়া সাবানে ৰার জাতীয় উপাদান থাকে বলে কাপড়ের ধরন বুঝে ব্যবহার করতে হয়।
তুষের জল : তুষের জলকেও পরিষ্কারক দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তুষের জল দিয়ে সিনটজ এবং কিটোন জাতীয় ছাপা ও রঙিন বস্ত্রাদি পরিষ্কার করা হয়। তুষকে ভূসিও বলা হয়। তুষকে একটা ন্যাকড়ায় জড়িয়ে পানিতে ভিজিয়ে রেখে যখন পানি বাদামি বর্ণ ধারণ করবে তখনই তুষের পানি ব্যবহার উপযোগী হবে।
অ্যামোনিয়া : এটা এক প্রকার তীব্র গ্যাস। সাধারণত পানিতে দ্রবীভূত অবস্থায় বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। সাদা রেশম ও পশমের বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার জন্য খর পানি এই অ্যামোনিয়ার সাহায্যে মৃদু করা হয়। রঙিন বস্ত্রাদি এই প্রকার মৃদু জলে পরিষ্কার করা হয় না। কারণ অ্যামোনিয়ার ফলে রং চটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কখনো কখনো কাপড়ের দাগ উঠানোর জন্যও ব্যবহার করা হয়।
রিঠা : প্রাচীনকাল থেকেই এই রিঠা ফল রেশম, পশমের বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। রিঠার খোসার মধ্যে স্যাপোনিন নামে একটা পদার্থ আছে এই স্যাপোনিনই কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করে। এতে কাপড়ের উজ্জ্বলতা, কোমলতা বাড়ায় ও রং ভালো থাকে ।
সিনথেটিক ডিটারজেন্ট : ডিটারজেন্ট এক ধরনের বারবিহীন পরিষ্কারক উপকরণ। রেশম, পশম ইত্যাদি মূল্যবান বস্ত্রাদি ডিটারজেন্টের সাহায্যে নির্ভয়ে পরিষ্কার করা যায়। রঙিন বস্ত্রাদির রং চটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না ।
ষ্টার্চ : চাল, আলু, ভুট্টা ইত্যাদি থেকে ষ্টাৰ্চ প্রস্তুত করা হয়। ষ্টার্চ ব্যবহারে কাপড়ের স্বাভাবিক কাঠিন্য এবং ধবধবে ভাব ফিরে আসে। ষ্টার্চ ব্যবহারের ফলে কাপড় সহজে ময়লা হয় না ।
গঁদ (Gam arabic): রেশম বস্ত্রের কাঠিন্য সৃষ্টি করতে এবং বস্ত্রের উজ্জ্বলতা আনতে ব্যবহৃত হয়।
নীল : কাপড় পরিষ্কার করার সময় সাবান ব্যবহারের ফলে কাপড়ে হলদে ভাবের সৃষ্টি হয়, একমাত্র নীল ব্যবহারের ফলে হলদে ভাব কেটে নীলাভ শুভ্রতা দেখা দেয়। কাপড়ে ব্যবহারের জন্য আলট্রামেরিন ( Ultramarine), প্রুশিয়ান (Prussian) এবং ইনডিগো বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। নীল তরল ও পাউডার দুইভাবেই বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
কাপড় মোলায়েমকারক : সিনথেটিক কাপড়ের জামাকাপড় কিছুদিন ব্যবহার করার পর একটু দৃঢ় প্রকৃতির হয়ে যায়। কাপড় মোলায়েমকারক ব্যবহার করলে কাপড় নরম ও কোমল থাকে। তবে বেশি ব্যবহার করলে কাপড়ের পানি শোষণ ক্ষমতা হ্রাস পায় ।
জীবাণুনাশক : কোনো সংক্রামক রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করার পর ব্যবহৃত জামাকাপড় জীবাণুমুক্ত করার জন্য জীবাণুনাশক উপকরণ দিয়ে ধোয়া হয়। যেমন : ক্লোরিন, ব্লিচিং ভিনিগার : বস্ত্র পরিষ্কারক দ্রব্য ভিনিগারকে কাপড়ের অতিরিক্ত নীল দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তা ছাড়া রঙিন কাপড়ের রং চটে গেলে পানিতে সামান্য ভিনিগার মিশিয়ে ওই পানিতে কিছুক্ষণ রাখলে রং ফিরে আসে।
লবণ : নতুন রঙিন কাপড়ের কাঁচা রং পাকা করার জন্য লবণের বহুল ব্যবহার দেখা যায়। রঙিন বস্ত্রাদি পরিষ্কার করার সময় সাবান পানিতে সামান্য পরিমাণে লবণ গুলে নিলে কাপড়ের রং নষ্ট হয় না। কাপড়ের দাগ তুলতেও লবণ ব্যবহার করা হয়।
কাজ - গৃহে ব্যবহৃত পরিষ্কারক এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির একটি তালিকা তৈরি কর ।
‘বস্ত্র ধৌতকরণ’ পরিবারের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার একটা উল্লেখযোগ্য দিক। কেননা প্রতিদিনই ব্যবহার্য কাপড় পরিষ্কার করতে হয়। আবার কখনো কখনো সাপ্তাহিক কিংবা মৌসুম ভিত্তিক ধৌতকরণ প্রক্রিয়া চলে। কাপড় ধোয়া পরিশ্রমের কাজ। এই কাজটি সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করে নেওয়া যায়। যেমন,:
ময়লা কাপড় বাছাই করা
পরিষ্কার করার সুবিধার জন্য ময়লার তারতম্য অনুসারে জামাকাপড়, বিছানার চাদর, ছোট কাপড় ভিন্ন ভিন্ন ভাগে ভাগ করে নিলে সুবিধা হয় ৷ নিত্যব্যবহার্য কাপড়,
আবার বিভিন্ন ধরনের তন্তুর কাপড়ে (যেমন, সুতি, লিনেন, রেশম, নাইলন, টেট্রন ইত্যাদি) একই পরিষ্কারক দ্রব্য বা ধৌতকরণ পদ্ধতি প্রযোজ্য নয়। বাছাইকরণের সময় যেসব কাপড়ের প্রকৃতি এবং ধোয়ার পদ্ধতি একই রকম সেগুলো সব এক সাথে রাখা উচিত। কাজেই বস্ত্ৰ ধৌতকরণের পূর্বে তন্তু, রং, আকার ও ময়লা অনুযায়ী বত্র বাছাই করতে হবে। কাপড়ে বা পোশাকের গায়ে যদি কোনো নির্দেশনা থাকে তবে তা অনুসরণ করা উচিত।
মেরামত করা—
ধৌত করার পূর্বে পোশাকের বা বস্ত্রের প্রয়োজনীয় মেরামত করে নিতে হয়। কাপড়ের কোনো অংশে ছেঁড়া থাকলে তা রিফু বা তালি দিয়ে ঠিক করে নিতে হয়। তা না হলে ধৌত করার সময় আরও বেশি ছিঁড়ে যেতে পারে। এই ছেঁড়া বড় হলে পোশাক পরার অযোগ্য হয়ে পড়ে। এ ছাড়া বোতাম, হুক, বকলেস ইত্যাদি ঢিলা কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কোনো অলংকারিক বোতাম, ক্লিপ থাকলে তা খুলে রাখতে হবে।
মেরামতের নমুনা
ক) রিফু করা : পোশাকের কোনো স্থানে খোঁচা লেগে ছিঁড়ে গেলে বা ফেঁসে গেলে ছেঁড়া স্থানের পড়েন সুতা সূক্ষ্ম ও নিপুণভাবে সুচের সাহায্যে ভরে দেওয়াকে রিফু বলা হয়। এজন্য বস্ত্রের সুতা অনুযায়ী সুচ ও সুতার প্রয়োজন। তা ছাড়া রিফু করার সুতা ও কাপড়ের রং এক হতে হয়। রিফু করার সময় ছেঁড়া অংশের চারদিকে প্রথমে পেনসিলের দাগ দিয়ে নিতে হয়। দাগের উপর দিয়ে ছোট করে রান ফোঁড় দিয়ে সেলাই করলে কাপড়ের সুতা খুলে আসবে না। এরপর এক একটি সুতার ভেতর দিয়ে সুচ দিয়ে প্ৰথমে টানা সুতার (Warp yarn) অংশ পরিপূরণ করতে হয়। ছেঁড়া অংশের সম্পূর্ণটা টানা সুতায় ভরে তুলে একই পদ্ধতিতে ভরা সুতার (Filling yarn) অংশের একটা সুতার উপর ও নিচ দিয়ে সেলাই করে পূরণ করতে হয়। এক্ষেত্রে ফ্রেম ব্যবহার করলে সুবিধা হয়।
খ) তালি দেওয়া : বস্ত্র ও পোশাকের কোনো অংশ ছিঁড়ে গেলে এক পরতা কাপড়ের উপর আরেক পরতা কাপড় রেখে সেলাই করে আটকানোকেই তালি দেওয়া বলা হয়। পোশাক পরিচ্ছেদের কোনো অংশ ছিদ হলে, পুড়ে গেলে বা পোকায় কাটলে তালি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তালি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যথা-
(i) সাধারণ তালি : তালি গোলাকার বা চারকোনাকার হতে পারে। যে কাপড়ে তালি দেওয়া হবে তার অনুরূপ রং ও জমিনের বড় একখণ্ড কাপড় নিতে হবে। তালির কাপড় ছেঁড়া অংশ অপেক্ষা বড় হবে। টুকরা কাপড়টি তালি দেওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে ইস্ত্রি করে নিতে হয়। যে কাপড়টি দিয়ে তালি দিতে হবে সে কাপড়ের টুকরা ছেঁড়া জায়গায় বসিয়ে ধার মুড়ে চারদিকে হেম ফোঁড় দিয়ে কাপড়ের সাথে আটকাতে হবে। এবার কাপড়টাকে উল্টো করে ছেঁড়া জায়গাটা কোনাকুনি কেটে মুড়ে টুকরা কাপড়ের সাথে হেম ফোঁড় দিয়ে সেলাই করে দুই পাশে ইস্ত্রি করে বসাতে হবে।
(ii) নকশা তালি : সাধারণ তালির জন্য কাপড়ের রঙের তালির কাপড় পাওয়া না গেলে অথবা তালি দিলে দেখতে খারাপ লাগবে মনে হলে অথবা ব্যবহৃত কাপড়টি এতই নতুন যে সৌন্দর্য নষ্ট করতে মন চাচ্ছে না, এখনো অনেক দিন ব্যবহার করতে হবে— এমন অবস্থায় নকশা তালির মাধ্যমে মেরামত করা যায় ৷ এক্ষেত্রে ছেড়া কাপড়ের উপর অন্য রঙের কাপড় দিয়ে নকশা করে কেটে প্রথমে টাক দিয়ে আটকিয়ে পরে বোতাম ফোঁড় দিয়ে সেলাই করতে হবে। উল্টা দিকের ছেঁড়া কাপড় সাধারণ তালির মতো সেলাই করতে হবে। যাতে সুতা বের হতে না পারে। এই নকশা তালির মতো আরও নকশা করে সমস্ত কাপড়ে সামঞ্জস্য বজায় রেখে আরও নকশা বসিয়ে নিলে তালি দেওয়ার ব্যাপারটি বোঝা যায় না। অনেকটা এপ্লিক নকশার মতো দেখায়। ছেলেদের প্যান্ট, শিশুদের জামায় নকশা তালি হিসেবে বড় স্টিকার ব্যবহার করা যায় ৷
দাগ অপসারণ— নানা কারণে জামাকাপড়ে দাগ লাগে এবং ব্যবহারের অনুপযোগি হয়। দেখতেও খারাপ লাগে। তাই সম্পূর্ণ কাপড়টি ধোয়ার আগে দাগযুক্ত স্থানটির দাগের উৎস, তন্তুর প্রকৃতি জানতে হবে। কেননা রং অন্যান্য পরিস্কারক দ্রব্যের সংস্পর্শে এসে দাগটি স্থায়ীভাবে বসে যেতে পারে।
বস্ত্র পরিষ্কারক উপকরণ নির্বাচন— বস্ত্র ধৌতকরণের আগেই বস্ত্রের তন্তুর প্রকৃতি, ময়লার ধরন, রং, আকার-আয়তন ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে উপযুক্ত পরিষ্কারক দ্রব্য সংগ্রহ করে নিতে হবে। বস্ত্ৰ অনুযায়ী গরম বা ঈষদুষ্ণ পানি কিংবা ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা হয়। আবার কাপড়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নীল, মাড় ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। যেমন: সুতি ও লিনেন কাপড়ে সাধারণ সাবান ও ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হয়। কিন্তু রেশমি ও পশমি বস্ত্র ডিটারজেন্ট পাউডার এবং ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে ধুতে হয়। সাবান মাখানোর পর প্রায় আধঘণ্টার মতো রেখে দিলে কাপড়ের ময়লা আলগা হয় এবং কাপড় ভালো পরিষ্কার হয়।
পানিতে ভেজানো— বেশি ময়লা কাপড় (মশারি, পর্দা, টেবিল ক্লথ ইত্যাদি) সাবান পানিতে দেওয়ার আগে ঠান্ডা বা ঈষদুষ্ণ পানিতে আধঘণ্টা বা একঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে কাপড়ের ময়লা আলগা হয়। এরপর সাবান পানি দিয়ে ধুলে কাপড় ভালো পরিষ্কার হয় এবং সাবানও কম খরচ হয়।
কাপড় কাচা— সাবান দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখার পর জামাকাপড়ের বেশি ময়লা অংশগুলো ঘষে পরিষ্কার করতে হয়। শার্টের কলার, হাতা, কাফ, প্যান্টের পেছনের অংশ, পাজামা-পেটিকোটের ঝুলের প্রান্ত প্রভৃতি স্থান বেশি ময়লা হয়। এ জন্য সম্পূর্ণ কাপড়টি কাচার আগে এই অংশগুলো একটু বেশি করে সাবান দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করতে হয়। প্রয়োজনে নরম ব্রাশ ব্যবহার করা যায়। এরপর সম্পূর্ণ কাপড় অল্প অল্প পানি দিয়ে থুপে থুপে ধুতে হয়। তবে রেশমি কাপড় না কেচে দুহাতে চাপ দিয়ে ধুতে হয়- রগড়ানো ঠিক নয়। এতে কাপড়ের কোমল আঁশের ক্ষতি হয়।
প্রক্ষালন— কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করার পর বড় বালতি বা গামলায় বেশি করে পানি নিয়ে কাপড় বারবার ধুয়ে ময়লা ও সাবান ছাড়াতে হয়। ময়লা ও সাবান ছাড়ানোর জন্য বারবার পানি বদলানোর প্রক্রিয়াকেই প্রক্ষালন বলা হয় ।
এরপর কাপড় নিংড়ে পানি বের করতে হয়। রেশমি কাপড়ের পানি নিংড়ানোর সময় না মুচড়িয়ে চেপে চেপে পানি বের করতে হয়। ধোয়া পশমি কাপড় মোটা তোয়ালের মধ্যে জড়িয়ে চাপ দিয়ে পানি শোষণ করাতে হবে। রেশমি ও পশমি কাপড় শেষবার ধোয়ার সময় পানিতে সামান্য পরিমাণ ভিনিগার মিশিয়ে নিলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
নীল ও মাড় প্রয়োগ— সাধারণত সুতি ও লিনেনের কাপড়ে মাড় দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কতোটা ঘন মাড় দেওয়া হবে তা নির্ভর করে কাপড়ের প্রকৃতির উপর। মোটা কাপড়ে পাতলা মাড় দেওয়া হয়। সাদা কাপড়ে নীল প্রয়োগ করা হয়। যখন কাপড়ে নীল ও মাড় দেওয়ার প্রয়োজন হয় তখন মাড়ের মতো নীল গুলে নেওয়া হয়। ধোয়া কাপড় নীল মেশানো মাড়ে ডুবিয়ে নিংড়ে নিয়ে রোদে শুকাতে হয়। এভাবে সুতি সাদা কাপড় এবং গাঢ় রঙের (নীল/কাল) কাপড়ের উজ্জ্বলতা বাড়ে।
কাপড় শুকানো— কাপড় ধোয়ার পর ঠিকভাবে না শুকালে কাপড়ের ধবধবে এবং কড়কড়ে ভাবটা আসে না। মেটমেটে ভাব এবং স্যাঁতসেঁতে গন্ধ হতে পারে। সাদা কাপড় রোদে শুকালে আরও সাদা হয়ে উঠে। রঙিন কাপড়, রেশমি কাপড় ছায়ায় শুকানো ভালো। পশমি কাপড় বাতাসপূর্ণ খোলামেলা ছায়াযুক্ত কোনো সমতল জায়গায় বিছিয়ে শুকাতে হয়। কাপড় বা পোশাকের ভারী মজবুত অংশ উপরের দিকে রেখে শুকাতে দিতে হয় । ইস্ত্রি করা— ধোয়ার পর প্রায় সব কাপড়েই কুঞ্চন সৃষ্টি হয়। কাপড় মসৃণ ও পরিপাটি করার জন্য ইস্ত্রি করা হয়। ইস্ত্রি করার আগে মাড় দেওয়া সুতি কাপড়গুলো সামান্য পানি ছিটিয়ে নরম করে নিতে হয়। কাপড়ের প্রকৃতি অনুসারে ইস্ত্রির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। যেমন : রেশম ও কৃত্রিম তন্তুর কাপড় সর্বনিম্ন তাপে, পশম ৩০০°F তাপে, সুতি ৪০০-৪৫০°F তাপে, লিনেন ৪৭৫°-৫০০°F তাপে ইস্ত্রি করা হয়।
হাওয়া লাগানো— ইস্ত্রি করার পর বস্ত্রাদিতে আর্দ্রভাব থাকে। এই অবস্থায় বক্স বা আলমারিতে রাখা ঠিক নয়। সেজন্য কিছুক্ষণ খোলা বাতাসে রেখে আর্দ্রভাব দূর করতে হয়। কাপড় শুকালে যথাস্থানে সংরক্ষণ করতে হয়।
রেশমি বস্ত্র বেশি উত্তাপ, ক্ষার ও ঘর্ষণ সহ্য করতে পারে না। ঘাম, ময়লাযুক্ত রেশমি বস্ত্র দ্রুত ধোয়া উচিত । কারণ ঘামের এসিড রেশমকে দুর্বল করে ।
এই ধরনের বস্ত্র ধৌতকরণের লক্ষণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
পশমি বস্ত্র ধৌতকরণ—
পশমি কাপড় প্রাণিজ তন্তু থেকে উৎপন্ন হয়। পানি, উত্তাপ, ক্ষার ও ঘর্ষণ পশম তন্তুকে দুর্বল করে। এ জন্য পশমি কাপড় ধোয়ার সময় ঈষদুষ্ণ পানি, কম ক্ষারযুক্ত পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করতে হয়।
ধোয়ার পদ্ধতি—
পশমি কাপড় চোপড় ধোয়ার আগে প্রয়োজন অনুসারে মেরামত, দাগ অপসারণের কাজটি করে নিতে হয়। সাদা ও রঙিন কাপড়গুলো ভাগ করতে হয় কারণ এগুলো আলাদা ধোয়া উচিত। তারপর কাপড়গুলো হালকাভাবে ব্রাশ করে আলগা ধুলাবালি পরিষ্কার করতে হয়। হাতে বোনা পশমের জামাকাপড় বেশ নমনীয় প্রকৃতির হয়। ধোয়ার পর এগুলির আকৃতি প্রায়ই ঠিক থাকে না। এ জন্য ধোয়ার আগে এসব পোশাকের আকৃতি বা নকশা একটা কাগজের উপর এঁকে রাখতে হয়। ধোয়ার পর ওই নকশা আঁকা কাগজের উপর পোশাক রেখে হাত দিয়ে টেনে আকৃতি ঠিক করে নেওয়া যায় |
পানি ব্যবহার না করে বিশেষ ধরনের কিছু রাসায়নিক পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করে কাপড় পরিষ্কার করাকেই শুষ্ক ধৌতকরণ বলা হয়। কিছু কিছু রেশমি ও পশমি কাপড় সাবান পানিতে ধুলে সংকুচিত হয় কিংবা রং চটে যাবার আশঙ্কা থাকে। এই পদ্ধতিতে কাপড় ধোয়া হলে কাপড়ের আকার আকৃতি ও উজ্জ্বলতা বজায় থাকে ।
ব্যবহৃত উপকরণ : শুষ্ক ধোলাইয়ের জন্য অনেক প্রকার রাসায়নিক দ্রাবক ব্যবহৃত হয়। এসব তরল পদার্থ সম্পূর্ণ পানিশূন্য থাকে। আর তাতে কিছুটা পানি থাকলেও তা তুলা বা কোনো প্রকার শোষক দিয়ে পানিশূন্য করা হয়। কেননা এ জাতীয় তরলে পানি থাকলে তা দিয়ে কাপড়ের ময়লা পরিষ্কার করা যায় না ।
উপকরণের যে সব বিশেষত্ব থাকা প্রয়োজন তা হলো—
ধোয়ার নিয়ম : শুষ্ক ধৌতকরণের বিভিন্ন ধাপগুলো নিম্নরূপ:
প্রথম পাত্রের তরলে কিছুটা বেনজিন সাবান বা লিসাপল জাতীয় রাসায়নিক দ্রব্য মেশালে ভালো হয়। কাপড়টি প্রথম পাত্রের তরলে ডুবিয়ে রগড়িয়ে তুলতে হয়।
নাইলন, পলিয়েষ্টার ইত্যাদি কৃত্রিম তন্তুর কাপড় ধোয়ার পদ্ধতি : এসব সিনথেটিক তন্তুর বাদি পানিতে ভিজিয়ে রাখলে সহজে নষ্ট হয় না। বেশি ময়লা বস্ত্রাদি ঈষদুষ্ণ সাবান জলে ভিজিয়ে রাখলে সহজে পরিষ্কার হয়। ভালো সাবানের গুঁড়া, বার ব্যবহার করা যায়। ধোয়ার সময় কখনো মোচড়াতে হয় না। আস্তে থুপে থুপে ধুতে হয়। পরিষ্কার পানি একাধিকবার ব্যবহার করে ময়লা ও সাবান দূর করতে হয়। তারপর ছায়াযুক্ত স্থানে দড়িতে টানিয়ে শুকাতে হয়। এই তন্তুর বস্ত্রগুলি ধৌতকরণের ফলে তেমন কুঞ্চন পড়ে না বলে ইস্ত্রি না করলেও চলে।
কাজ - বস্ত্র ধৌতকরণের পূর্ব প্রস্তুতি বর্ণনা কর।
সংরক্ষণ বলতে সঠিক নিয়মে রেখে দেওয়াকে বোঝায়। এখানে ব্যবহৃত বস্ত্রাদি ধোয়া ও ইস্ত্রি করার পর যথাযথ স্থানে স্বল্পমেয়াদি বা দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য রেখে দেওয়ার কথা বোঝানো হয়েছে। আমরা নানা ধরনের কাপড়চোপড় ব্যবহার করি। এদের মধ্যে ঘরোয়া পোশাক, বাইরের পোশাক, উৎসব-অনুষ্ঠানের পোশাক, মৌসুমি পোশাক অন্তর্গত। এ ছাড়া প্রায় সব বাড়িতে বিছানাপত্র এবং গৃহসজ্জার নানা টেবিল ক্লথ, কুশন কভার, ন্যাপকিন, ট্রে ক্লথ ইত্যাদি থাকে। এগুলোর উজ্জ্বলতা, সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব রক্ষার জন্য সঠিকভাবে যত্ন ও সংরক্ষণ করতে হয়। সংরক্ষণ একক হিসেবে স্টিল ও কাঠের আলমারি, বড় স্টিলের বক্স, সুটকেস ইত্যাদি ব্যবহার করতে হয়।
কাপড় সংরক্ষণের লক্ষণীয় বিষয় :
শীতকাল ছাড়া বছরের অন্য সময়ে পশমি বস্ত্র ব্যবহৃত হয় না। বছরের ২-৩ মাস পশমি বস্ত্র ব্যবহৃত হয়।
বছরের বাকি সময় এগুলো তোলাই থাকে। পশমি বস্ত্রের দাম তুলনামূলক বেশি। সঠিক উপায়ে সংরক্ষণ
করতে পারলে পশমি কাপড় অনেক দিন পর্যন্ত টেকে।
সংরক্ষণের উপায়গুলো নিম্নরূপ—
সংরক্ষণের উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো নিম্নরূপ—
কাজ – বিভিন্ন ধরনের তন্তুর বস্ত্র সংরক্ষণে সতর্কতামূলক বিষয় সম্পর্কে লেখ।
নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এ জন্য সে নিজেকে মনের মতো সাজায় ৷ কোনো ব্যক্তির সাজসজ্জার পারিপাট্য বলতে ব্যক্তির দেহের সাথে মানানসই পোশাক পরিচ্ছদ ও আনুষঙ্গিক প্রসাধন কার্যের মিলিত অবস্থাকে বোঝায়। শারীরিক সৌন্দর্য তখনই উদ্ভাসিত হয় যখন শরীর সুস্থ থাকে। সুস্থ দেহে সুস্থ মন থাকে। সুস্থ্য মনই শৈল্পিকভাবে পরিপাটি থাকতে তাগিদ সৃষ্টি করে।
পারিপাট্য বজায় রাখার জন্য করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ—
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা
ব্যক্তির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অন্যতম শর্ত হলো সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য প্রয়োজন দেহের পরিচ্ছন্নতা ও যত্ন। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে মানবদেহ গঠিত যথা: হাত, পা, দাঁত, চোখ, কান, নাক, গলা, চুল, ত্বক ইত্যাদি। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর পরিচ্ছন্নতার সার্বিক রূপই হলো দৈহিক পরিচ্ছন্নতা। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অটুট রাখাই দৈহিক পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্য। অঙ্গ— প্রত্যঙ্গের যত্নের মাধ্যমে দাঁত, ত্বক, চুল তথা সমগ্র দেহাবয়ব মোহনীয় হয়ে উঠলে মানসিক জড়তা দূর হয়ে ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা ফুটে উঠে। নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে সবার সামনে প্রকাশ করতে কোনো সংকোচ থাকে না।
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য করণীয় বিষয়গুলো হলো—
ক) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা—
হাতের যত্ন : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে হাত। মসৃণ ও সুডোল হাত সৌন্দর্য ও সুস্থতা প্ৰকাশ করে। হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য যেসব বিষয় লক্ষ রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো—
পায়ের যত্ন : পায়ের যত্নে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
দাঁতের যত্ন : দাঁতের যত্নে লক্ষণীয় বিষয়গুলো—
চোখের যত্ন : মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখই সবচেয়ে কোমল ও সূক্ষ্ম। উত্তেজনাপ্রবণ কালিমাবিহীন, স্বচ্ছ, চকচকে চোখ সুস্থতার পরিচয় বহন করে। চোখের নিরাপত্তা বিধানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে-
চুলের যত্ন : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল ও মসৃণ এবং সুবিন্যস্ত চুল ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। যেসব নিয়মগুলো চুলের সৌন্দর্য ও সুস্থতা রক্ষা করে সেগুলো হলো—
নাক, কান ও গলা : নাক, কান ও গলা এই নিকটবর্তী অঙ্গগুলোর সুস্থতা খুবই জরুরি। শ্রবণেন্দ্রীয় কান দিয়ে কথা ঠিকভাবে শুনেই আমরা নিজেরা কথার উত্তর দিই, চিন্তা করি। ঠান্ডা লাগলে নাক গলা বসে গেলে কিংবা নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরলে দেখতে যেমন খারাপ লাগে, তেমনি স্বাভাবিক জীবনেও বাধার সৃষ্টি হয় । স্পষ্ট ভাষায় মিষ্ট স্বরে কথা বললে সুন্দর ব্যক্তিত্বেরই পরিচয় ফুটে উঠে। গলার সুস্থতার জন্য লবণযুক্ত গরম পানি ভালো ৷
ত্বকের যত্ন : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ত্বক উজ্জ্বল ও নীরোগ হয়। ত্বকের বর্ণ যেমনই হোক না কেন তা যদি কোমল, মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে তা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বেরই পরিচয় দেয়। ত্বকের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন—
খ) পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা—
শুধুমাত্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচ্ছন্নতা দেহের সার্বিক পরিচ্ছন্নতা আনয়ন করতে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন পোশাক— পরিচ্ছদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। পোশাকের-পরিচ্ছন্নতার সাথে দেহের সুস্থতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ পোশাক মানুষের দেহের সাথে সংলগ্ন থাকে এবং দেহের পরিচ্ছন্নতাকে সংরক্ষণ করে। অপরিচ্ছন্ন পোশাক দৈহিক পরিচ্ছন্নতাকে বাধাপ্রাপ্ত করে। এই অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিপাট্যের অন্তরায়। এ জন্য দৈহিক পরিচ্ছন্নতাকে নিশ্চিত করার জন্য পোশাক পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য।
কাজ – পারিপাট্যতার উপায়গুলো কী বর্ণনা কর ।
পোশাক ব্যক্তিসত্তার একটা অপরিহার্য অঙ্গ। পোশাক পরিধান মানুষর মৌলিক, মানবিক অধিকার। আর ব্যক্তিত্ব শব্দটির মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হলো ‘সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য ব্যক্তির গঠন, আচরণের ধরন, আগ্রহ, ভাবভঙ্গি, সামর্থ্য এবং প্রবণতার সংহতি এবং ঐক্য।' অর্থাৎ ব্যক্তিত্ব দেহ ও মনের জীবন্ত ঐক্য বিশেষ ।
পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তি তার মনের অন্তর্নিহিত অনুভূতিকে প্রকাশ করে থাকে। ব্যক্তিত্বের সঙ্গে পোশাকের সুনিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পোশাক ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম বা হাতিয়ার। যেমন—
অন্তর্মুখী, বহির্মুখী এবং উভয়মুখী ব্যক্তিত্বের লোক রয়েছে। ব্যক্তিত্বের ভিন্নতা রুচিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু যে ধরনের ব্যক্তিত্বেরই হোকনা কেন সুরুচিপূর্ণ মানানসই পোশাক ব্যক্তিত্বকে উজ্জ্বল করে। কুরুচিপূর্ণ উদ্ভট, বেখাপ্পা পোশাক ব্যক্তিত্বকে ম্লান করে দেয়।
কাজ – পোশাকের মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ কীভাবে ঘটে বুঝিয়ে লেখ।
গৃহে নানা ধরনের কার্যক্রম সম্পন্ন হয় এবং অব্যবহৃত জিনিসের সৃষ্টি হয়। এগুলোর মধ্যে জীর্ণ ও পুরানো বত্র অন্যতম। এসব অপ্রয়োজনীয় বস্ত্রকে নানাভাবে কাজে লাগানো যায়। যেমন—
পুরানো বস্ত্র, শাড়ি, বিছানার চাদর, পর্দা ইত্যাদির রং চটে গেলে, সামান্য ছিঁড়ে গেলে ফেলে রাখা হয়। পুরানো কাপড়ের সাহায্যে গ্রামের মেয়েরা সুন্দর করে নকশি কাঁথা বানায়। পুরানো কাপড়ের কাঁথায় নানা ধরনের লতাপাতা, দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এ ভাবে তৈরি হয় নকশি কাঁথা। বর্তমানে এসব কাঁথা শুধু শীতের
আচ্ছাদন নয় বরং বিছানার চাদর, সোফার কাভার, দেয়াল সজ্জা, মেঝের আচ্ছাদন হিসেবেও ব্যবহার করা হয় ।
পুরানো শাড়ি দিয়ে পা মোছার পাপোস তৈরি করা যায়, ধাপগুলো নিম্নরূপ—
টুকরা কাপড়ের ব্যবহার :
বাড়িতে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করার পর বিভিন্ন টুকরা কাপড় অপ্রয়োজনীয় অংশ হিসেবে বের হয়। বড় টুকরাগুলোকে একত্র করে একই মাপ ও একই আকৃতিতে কেটে সবগুলো কাপড় পরপর মেশিনে জোড়া লাগিয়ে চারপাশে কাপড়ের পাড় বা অন্য কাপড়ের বর্ডার দিয়ে বেড কভার, টেবিল কভার ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
পুরোনো কাপড় দিয়ে তৈরি পাপোস |
কাজ – গৃহে অপ্রয়োজনীয় বস্ত্র ব্যবহার করে পাপোস তৈরি করে দেখাও ।
Read more